Posts

Sunday, September 1, 2019

Srishti Episode:1

সৃষ্টি

পর্ব-১: বেশধারন

আজ রবিবার,ছুটির দিন।বিকেল বেলা নবীন তাই তার দুই ছেলে মুম্বা আর গিগা কে নিয়ে বাড়ির সামনের বাগানটায় ক্রিকেট খেলছে আর স্ত্রী রূপসা একটু দূরেই বাগানের লোহার বেঞ্চটাতে বসে উল দিয়ে বুনে কী একটা সোয়েটার না মাফলার বানাচ্ছে আর বাড়ির পোষা কুকুর জিঙ্গো তার পায়ের কাছে বসে ঝিমুচ্ছে,জিঙ্গো কিন্তু এমনিতে এমন ল্যাদখোর নয়,এই আগের রবিবারেও ক্রিকেট খেলার সময় সে গিগাকে মুখ দিয়ে বল এনে দিয়েছে,সারা বাগান জুড়ে ছুটে বেরিয়েছে,কিন্তু দুদিন ধরে কীযেন হয়েছে তার,সারাদিন এমন ঝিম ধরে থাকে আর রাত হলেই একটু পর পর ঘেউ ঘেউ করে ওঠে।তাই রূপসা ঠিক করেছে কাল জিঙ্গো কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।

এমনি অন্য দিন গুলোতে নবীন অফিসের কাজের জন্য বেশী সময় পায় না,কিন্ত রবিবার পুরো দিনটাই সে তুলে রাখে তার পরিবারের জন্য,হয় সে ছেলেদের সাথে খেলে না হলে কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যায় আর যদি ছুটিটা একটু বেশি দিনের জন্য থাকে তাহলে গিয়ে তার মা,বাবা,দাদা,বৌদি, ভাইঝি সুমির সাথে দেখা করে আসে,নবীন তার এই চাকরিটার জন্যই বাড়ি থেকে দূরে এই মফস্সলে এসে রয়েছে,জায়গাটার নাম সারনা খুব সুন্দর জায়গা তাই সরকারি কোয়ার্টার ছেড়ে সে এইখানে বাড়িটা বানিয়েছে।

আকাশ পরিস্কার,শরতের ঠান্ডা হাওয়া বইছে,এরই মধ্যে খেলা বেশ জমে উঠেছে,মুম্বা পর পর ছয় মারছে,গিগা আর তাদের চাকর বৃন্দাবন কোনোমতেই তাকে আউট করতে পারছে না আর নবীন উইকেট কিপিং করছে এইভাবে আধ ঘন্টা পর বৃন্দাবনের একটা ক্যাচ আউটের সৌজন্যে মুম্বা আউট হল আর রাগে বিরবির করে কী যেন একটা বলতে বলতে ব্যাট টা মাটিতে আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে বৃন্দাবনের কাছ থেকে বলটা হাতে নিলো।

গিগা গিয়ে ব্যাট টা তুলে নিয়ে দাড়াল, এখন সে ব্যাটিং করবে,সেও খুব সিরিয়াস তার খেলার ব্যাপারে এতক্ষন ধরে মুম্বা তার থেকে একবছরের ছোট হওয়া সত্ত্বেও খুূব খাটিয়েছে, এখন তাকে দাদা হিসেবে তার দাদাগিরিটা দেখাতেই হবে।

 হঠাত দেখা গেল পরিষ্কার আকাশ টা কালো মেঘে ঢেকে গেছে,একেবারে ঘোর অন্ধকার চারিদিক ছেয়ে ফেলেছে,এমন মেঘ বহুকাল পর দেখল নবীন আর রূপসা।রূপসা তার উল বোনা থামিয়ে বলল 'চলো,অনেক হয়েছে খেলা,এখন রাখো' গিগা চেচিয়ে বলল 'থামো না মা,এই তো ব্যাট টা পেলাম' রূপসা বলল 'ঠিক আছে,আমি ভিতরে যাচ্ছি তোমরা তাড়াতাড়ি এসো' এই বলে সে বাড়ির ভিতরে গেল ছাদ থেকে জামাকাপড় আনতে জিঙ্গো ও তার পিছন পিছন ছুটলো।

এবার মুম্বা বল করলো গিগা আস্তে করে বলে ব্যাট টাকে ছোয়ালো কিন্তু বলটা বেশি দূর গেলো না তাই গিগা আর রান নিলো না,এবার পরের বলটা করলো মুম্বা, গিগা সজোরে বলটা মারলো বাড়ির বারান্দা পার করে একেবারে বাড়ির ভিতরে বলটা চলে গেল মুম্বা ছুটলো বলটা আনতে একেবারে বসার ঘরে বলটা গিয়ে পড়েছে।

এই ঘরে সব দেয়ালে শুধু তাদের ছবি যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ছবি গুলোই রূপসা আর নবীনের একসাথের ছবি কোনোটা তাদের বিয়ের আগের প্রেম করার ছবি আর কোনোটা বিয়ের পরের।
এমন সময় বল নিতে আসা মুম্বা কিছু একটা দেখে ভীষন জোরে চিতকার করে উঠল আর তখনই বাইরে বৃষ্টি শুরু হল আর বিদ্যুত চমকাতে লাগল আর সারা বাড়িতে লোডশেডিং হয়ে গেল।তার চিতকার শুনে সকলেই ছুটে এল রূপসা এসে মুম্বাকে কোলে নিয়ে বলতে লাগলো 'কী হয়েছে বাবা?কী হয়েছে?এই তো আমি।'

মুম্বা কিছু বলছে না শুধু ফোপাচ্ছে,সারা ঘর জুড়ে অন্ধকার,কিছুই ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।এতক্ষনে নবীন আর গিগাও এসে গেছে আর বৃন্দাবন গেছে জেনারেটর টা চালিয়ে দিতে,জেনারেটর চালাতেই সারা ঘর আলো হল ,আলো জলার সাথে সাথে সকলের চোখ গেল দেয়ালের ছবি গুলোর দিকে ,আর তারা যা দেখল তাতে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়।

দেখল প্রতিটা ছবিতে নবীনের চোখ,নাক,মাথা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে আর রূপসার ছবিগুলোতে রক্ত দিয়ে কে যেন সিদুর পড়িয়ে দিয়েছে।এই দৃশ্য দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল সবার মুখে একটা ভয় আর শঙ্কা মেশানো ভঙ্গি।শুধু জিঙ্গো এসে ভীষন জোরে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল যেন সে কী একটা তাড়ানোর প্রানপন চেষ্টা করছে।

No comments:

Post a Comment