Posts

Sunday, August 4, 2019

Anamika

অনামিকা

 গলির শেষে অন্য বেশে
দাড়িয়ে থাকা মেয়ে
একটা সময় স্কুলে যেত
দু-চোখ স্বপ্ন নিয়ে।
হারিয়ে গেছে সে সব কিছুই
সূর্যাস্তের মতো,
এখন সবাই বেশ্যা বলে
বাড়িয়ে তোলে ক্ষত। 
পড়াশোনায় ভালোই ছিল,
মন্দ ছিল না নাচে,
রূপেও ছিল অপরূপা,
চলত নিজের ধাচে।
মা বাবা তার চাকরি করে,
সময় দেয়না মোটে
অভাব যে তার ভালোবাসার
টাকায় কি তা মেটে?
হঠাত্ করে সেই দিনটা
এল যখন চলে
স্কুলের পথে,গোলাপ হাতে
ছেলেটা দিল বলে-
'তুমি কি অামায় ভালোবাসো? 
আমি তোমায় বাসি,'
না বলতে পারল না সে
ঠোটে যে তার হাসি। 
ছেলেটা তো তার অচেনা নয়
অনেকদিনের চেনা
স্কুলেরই সিনিয়ার
নীলদা নামেই জানা। 
তারপর সেই চলতে থাকে
সবার যেমন চলে
লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম পিরীতি
পার্কে,সিনেমা হলে। 
নীল একদিন বলল তাকে
'চল বিয়ে করি'
সে শুধুই বলল হেসে,
'কীসের তাড়াতাড়ি'
সে কিন্তু ভালোই জানে
বাড়িতে নেবে না মেনে। 
নীল যে কোনো কাজ করেনা,
সবাই বেকার বলেই চেনে। 
একদিন নীল বলল যে-সে
চাকরি পেয়ে গেছে,
রাত্রিবেলায় চলে এসো
রেলস্টেশনের কাছে।
রীতিমতো হাজির সে
রাতের অন্ধকারে
নীলের সাথে পালিয়ে গেল
নীল সাগরের পারে,
শহরটাকে বোম্বে বলে,
দুজনাতেই থাকে,
ভালোবাসার নেশায় মেতে
ঘিঞ্জি গলির ফাঁকে। 
মাস দুয়েক তার ভালোই গেল
গলির ছোট ঘরে, 
বাবার ঘড়ি,মায়ের গয়না
এসব বিক্রি করে। 
নীল যে তাকে মিথ্যে বলে
এনেছে এত দূরে
বেকার নামের তকমাটা তার
এখনো যায়নি সরে।
মেয়েটা একদিন ফোন করল
তার মায়ের কাছে, 
বলল-'ভুল হয়েছে ক্ষমা করে দাও
সবাই কেমন আছে?'
মা বলে তার-'চিনিনা তোকে,
আপন যদি হতি,
তবে কি আর মুখে চুনকালি
এমনভাবে দিতি?'
এই সব কিছু সে বলল তখন
নীলের কাছে গিয়ে।
নীল শুনে সব বলল তাকে
মুচকি হাসি দিয়ে
'ভুলটা যখন আমিই করেছি
শোধরাবোও আমি, 
আমার কাছে তুমিই সব
সবের থেকে দামি।'
দুদিন পরে মেয়েটি ঘরে
একলা বসে আছে, 
নীল বলেছে 'বাইরে যাচ্ছি
একটু কাজ আছে।'
ঘন্টাকয়েক পরে যখন
নীল এল ফিরে,
কালো মেঘের ঘনঘটা
তাকে ধরল ঘিরে। 
চারটি ছেলে নীলের সাথে
যখন এল ঘরে,
নীল বলে-'তোমায়,ওদের কাছে
দিয়েছি বিক্রি করে।'
অশ্রু চোখে মেয়ে বলে
'ওগো,আমায় বাঁচাও'
নীল বলে-'তোমায়,
কেউ বাঁচাবেনা। 
যত খুশি চেঁচাও।
বড়লোকের মেয়ে ভেবে
ফাঁসিয়ে ছিলাম তোমায়, 
বাপের বাড়ির ধন-দৌলত
এনে দেবে আমায়।'
তারপর সেই ছেলেগুলো
মেয়েটির মুখ বাঁধে, 
গাড়ির খোপে নিয়ে যায়
তুলে নিয়ে কাঁধে। 
সেই থেকে এই অন্ধগলিই
ঠিকানা যে তার। 
বাড়ি ফেরার কোনোরকম
চেষ্টা করেনি আর। 
জানত সে মা বাবা তার
মেনে নিতেও পারে, 
কিন্তু,সে সমাজ বড়ই পাষান
যাবে দূরে সরে। 
মাস পাঁচেক পরে যখন
ঐ দিনটা এল, 
বেশ্যা মেয়ে মা হয়ে যে
মেয়ে জন্ম দিল।
মা যে আবার বুক বেঁধেছে
মনে সাধ নিয়ে,
স্বপ্নপূরন করাতে হবে
মেয়েটাকে দিয়ে। 
অন্ধগলির মেয়েটি এখন
সেই আশাতেই থাকে
যদি,ডুবে যাওয়া সূর্য
আবার,ওঠে পুবদিকে।

1 comment: