Posts

Monday, May 11, 2020

Renu o koyekti Projapoti

রেনু ও কয়েকটি প্রজাপতি

কলমে - দিব্যজিৎ সরকার




# রেনু ও কয়েকটি প্রজাপতি
# কলমে - দিব্যজিৎ সরকার
'দেখো তো রেনু আকাশে কি দেখা যায়?'
'ঐটা তো এরোপ্লেন, মামা।'
'হ্যাঁ,তুমি এর আগে কখনো এরোপ্লেন দেখেছো?'
'হ্যাঁ।'
'কোথায় দেখেছো?ছবিতে?'
'না...আমি তো এরোপ্লেন এ চড়েছি।'
কথাটা শুনে রেনুর মামা অনল বেশ অবাক হলো তার বোনঝি যা বলছে সেটা তার কাছে অসম্ভব মনে হলো কারণ, তার বোন রূপা আর তার স্বামি তপন  তাকে নিয়ে বিমানে চেপে কোথাও বেড়াতে গেছে সেটা তার মনে পরেনা।আর তাছাড়া সে  তো রেনুর জন্মের পর নিয়মিত তার বোনদের খবর রাখতো কখনো যে তারা এরোপ্লেনে চড়ে কোথাও গেছে এমনটা তো শোনেনি।যাই হোক রেনুকে অনল আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না ভাবলো মা বাপ মরা মেয়ে,কি বলতে কি বলেছে।অনল বললো যাও রেনু ভিতরে গিয়ে অরির সাথে খেলো,অরি অনল এর ই সাত বছরের ছেলে।
রেনুর বয়সও এখন সাত বছর।তার বয়স যখন 9 মাস, তখন রাস্তা দিয়ে আসার সময় তার মা বাবা কে  একটা লরি এসে অ্যাকসিডেন্ট করে...তারপর সব শেষ।তারপর থেকে রেনু তার ঠাকুরদা ব্রজবিহারী বাবুর কাছেই মানুষ,যদিও অনল অনেকবার বোনঝিকে এনে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করেছে,ব্রজবিহারী বাবুকে বলেছে এই গ্রামে থাকলে রেনুর পড়ার কোনো উন্নতি হবেনা তার থেকে আমি রেনুকে আমার সাথে কলকাতায় নিয়ে যাই ঐখানে অরির সাথে থাকলেই ওর ভালো হবে।কিন্তু ব্রজবিহারী বাবু বার বার বলেছেন দেশের আসল বীজ হলো গ্রামে,দেশের যত বড়ো বড় জ্ঞানী,মহাপুরুষ আছে তাদের বেশির ভাগ ই কিন্তু গ্রামে বড়ো হয়েছে,আর রেনুও তেমনি দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে ওই বুড়ো টাকেই সাই দিয়েছে।তাই অগত্যা বার বার নিরাশ হয়েই অনল কে ফিরে আসতে হয়েচে।
কিন্তু দিন সাতেক আগে হঠাৎ অনল এর কাছে ফোন আসে,সে জানতে পারে যে ব্রজবিহারী বাবুর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে,পরদিন ই অনল ছুটে যায় তাকে দেখতে,গিয়ে দেখে ব্রজবিহরী বাবু কে কাছের ই এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।হাসপাতালে একটা বেঞ্চিতে পাশের বাড়ির পরিতোষ বাবুর সাথে বসে আছে রেনু।অনল কে দেখে পরিতোষ বাবু যেনো পরম সুখে এক গাল হাসি নিয়ে ছুটে আসে।অনল তাকে বলে 'কাকাবাবুর শরীরের অবস্থা এখন কেমন ?'
পরিতোষ বাবু বলেন ' কাল রাত্রে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পরেই আমরা নিয়ে এসেছিলাম বলে এই যাত্রায় রক্ষে পেলেন,ডাক্তার বলেছে আর একটু দেরি হলেই আর করার কিছু ছিলনা।ডাক্তার রা কাল রাত্রে অপারেশন করেছে এখন ভালো আছে। কিন্তু!'
অনল বলো ' কিন্তু কি?'
পরিতোষ বাবু রেনুর দিকে ইশারা করে বললেন
' কিন্তু সমস্যা হোয়েছে এই মেয়েকে নিয়ে,কতবার বলেছি চল আমার সাথে বাড়ি যাই,কিন্তু দাদু কে ছেড়ে কোথাও যাবার নাম নেই,কাল রাত থেকে নাওয়া খাওয়া ভুলে এই বেঞ্চিতে বসে আছে।'
অনল বললো ' ঠিক আছে,আমি দেখছি '
অনল রেনু কে গিয়ে বললো ' কেমন আছো রেনু? '
রেনু মুখ গোমড়া করে জবাব দিল ' ভালো '
তারপর অনল তার পকেট থেকে একটা ক্যাডবেরি রেনু কে দিল,রেনু ভাবলেশহীন ভাবে সেটা নিলো।
এরপর অনল সোজা চলে গেলো ডাক্তার নিজাম এর কাছে,তাকে নিয়ে গেলো পরিতোষ বাবু ,বললো যে ইনি ব্রজ বাবুকে দেখছেন।
অনল তাকে বললো 'ডাক্তার বাবু patient এর সাথে কখন দেখা করা যাবে?'
ডাক্তার বাবূ‌ বললেন 'একটু আগেই পেশেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে,এখন ঘুমিয়ে আছেন,একটু পরেই চাইলে দেখা করতে পারেন কিন্তু দুই জনের বেশি কোনো মতই না।'
'আর রুগী কবে বাড়ি যেতে পারবে?'
'রুগীর এত বড়ো একটা অপারেশন হলো এক সপ্তাহ তো লাগবেই ছুটি দিতে।'
আধা ঘন্টা পরে রেনু আর অনল ব্রজ বাবু কে দেখতে গেলো।অনল বললো 'আপনার এখন এমন অবস্থা এই অবস্থায় তো আপনার পক্ষে রেনুর দেখা শোনা করা সম্ভব না তার থেকে আমি ওকে আমার সাথে বাড়ি নিয়ে যাই,শরীর সুস্থ হলে না হয় ওকে নিয়ে আসবেন।'
প্রথমে অসম্মতি থাকলেও পরে রাজি হলেন বললেন 'ঠিক আছে নিয়ে যাও'।
আর কথাটা বলে যখন রেনু কে নিয়ে ব্রজ বাবুর ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে আসছে তখন পিছন ফিরে দেখল ব্রজ বাবুর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি,কিন্তু এই হাসি যেনো স্বাভাবিক না এর উৎস যেনো কোনো এক অন্ধকার জগতে।তখনই রেনু কে নিয়ে অনল সোজা বাড়ি চলে আসে।
আজ সকালে কোম্পানির দিকে যাওয়ার সময় অনল দেখলো রেনু, অরি র সাথে বসে খেলছে কিন্তু রেনুর মধ্যে কোনো চঞ্চলতা নেই।এই বয়স এর বাচ্চা রা খেলার সময় চেঁচামেচি করবে,যার সাথে খেলছে তার চুল ধরে টানবে নাহলে, কামড়ে দেবে এমন টাই অনল চিরকাল দেখে এসেছে। অনল নিজেই ছোটবেলায় তার বোন রূপার সাথে খেলার সময় এমনটাই করেছে। কিন্তু তার ভাগ্নি টি হয়েছে তার উল্টো তার চোখ দুটো দেখলেই মনে হয় যেনো কোনো পাখি উরে উরে ক্লান্ত হয়ে নদীর ধরে কোনো গাছের ডালে বসে এক দৃষ্টি তে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।অনল পরক্ষণেই ভাবলো এমন শান্ত মেয়েই তো তার দরকার ,যে কোনো কথা বলবে না যাই হয়ে
যাক চুপ চাপ শুধু বসে বসে দেখবে।
সে মনে মনে বললো না আর দেরি করলে চলবে না, এমনিই অনেক দেরি করে ফেলেছে সে,আজ রাতেই কাজ টা তাকে সেরে ফেলতে হবে।যাবার পথে অনল তার স্ত্রী পৃথা কে বলে গেলো 'তোমরা সব খেয়ে দেয়ে শুয়ে পরো আমার ফিরতে রাত হবে,আর আমি বাইরে থেকে খেয়ে আসবো।'
পৃথা বললো 'ঠিক আছে , তবে এখন ছেলে বড়ো হচ্ছে রোজ রাতে কি ঐ সব ছাই পাশ না খেয়ে এলেই না'
এক ধমক দিয়ে অনল বলে উঠলো 'আহঃ এত জ্ঞান কবজিও না তো।'
বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেলো।
রাত বারোটা বাজে পৃথা অরি আর তাদের পাশের  ঘরে রেনু সবাই ঘুমিয়ে গেছে।এমন সময় অনল চাবি দিয়ে বাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো,রোজ রাতে ফিরতে দেরি হয় বলে গেট এর একটা চাবি সব সময় তার কাছে থাকে।রাত্রে এসে দরজা খোলার জন্য স্ত্রী কে বিরক্ত করে না সে।কিন্তু অন্য সব দিনের মত আজ ও সে মদ খেয়ে এসেছে।মদ না খেলে তার মাথা কাজ করেনা,নিজেকে অজ্ঞান মনে হয়,কিন্তু মদ খেলেই সে তার সজ্ঞান এ জ্ঞানী হয়ে ওঠে,কারণ আজ সে যা করতে যাচ্ছে তার জন্য প্রয়োজন স্নায়ুর ওপর অসম্ভব রকমের দখল।
জানালা দিয়ে পূর্ণিমার আলো ঘরে ঢুকছে আর তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অনল এর হাতে আছে একটা কাচের বাক্স তার মধ্যে একটু পর পর ঝন ঝন করে উঠছে একটা বিছা আর এই বিছার এক কামড়েই  যাবে কাম তামাম, এই ভেবে তার মধ্যে এক ভীষণ রকমের খুশি তৈরি হচ্ছে,মনে হচ্ছে যেন সেই ই এই পৃথবীতে একা বিরাজমান, সে ই এই সমগ্র বিশ্বের অধিপতি।আজ তার দীর্ঘ সাত বছরের অপেক্ষার আজ অবসান হতে চলেছে।
আর এই গল্পের শুরু হযেছিল আজ থেকে 9 বছর আগে। তখন সদ্য কলেজ পাশ করেছে তথাগত চক্রবর্তী র এক মাত্র মেয়ে রূপা,নামের মতই সে ছিল ভীষণ সুন্দর , বাড়িতে রোজ আসছে নানান ছেলের সম্বন্ধ  কিন্তু বিখ্যাত t c plastic কোম্পানির মালিক তথাগত বাবুর কাউকেই পছন্দ হচ্ছেনা।কিন্তু রূপা তখন তার কলেজ এর বন্ধু তপন এর প্রেমে মশগুল ,কিন্তু কোনোমতেই বাবা কে সে বলে উঠতে  পারছেনা তপন এর কথা কারণ এক তো তপন ব্রাহ্মণ না,আর সদ্য কলেজ শেষ করে এখনও কোনো কাজ জোগাড় করে উঠতে পারেনি সে আর সে হলো গ্রাম এর এক প্রাথমিক স্কুল মাস্টারের ছেলে। তাই এক রাতের অন্ধকারে তপনের সাথে রূপা পালিয়ে যায়,তারপর অনেক খোজ খবর করে তথাগত বাবু সব জানতে পেরে রেগে গিয়ে বলেন আমার মেয়ে আজ থেকে কোনো মেয়ে নেই, তার নাম যেনো এই বাড়িতে উচ্চারণ না করা হয়।
তার পর কেটে যায় আরো দুই বছর ততদিনে তথাগত বাবুর শরীর অনেক ভেঙে গেছে,স্ত্রী গত হয়েছেন, ব্যাবসা তুলে দিয়েছিলেন ছেলে অনল এর হাতে কিন্তু তার ব্যাবসার দিকে কোনো মন নেই,শুধু ফুর্তি,নেশা ভাং করে একেবারে উচ্ছন্নে গেছে ,ছেলের মতি ফিরিয়ে আনতে তারই এক বন্ধুর কন্যা পৃথা কে ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।এরই মধ্যে একদিন চিঠি পেলেন রূপার তার মধ্যে সে তার বাবার কাছে অনেক বার ক্ষমা ছেয়েছে আর একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ের ছবি পাঠিয়ে লিখেছে বাবা এই হলো তোমার নাতনি রেনু,আশির্বাদ করো আর পারলে একবার এসে দেখে যেও। নাতনির মুখ দেখে তথাগত বাবুর মন গলে গেছিলো কিন্তু মেয়ের কাছে গিয়ে তাকে বুকে টেনে নিয়ে ক্ষমা করার স্বভাব তার নেই তাই আর তিনি রপাকে দেখতে যান নি,এর কয়েকদিন পরেই তিনি মারা যান।কিন্তু তার মৃত্যুর পর উকিল এসে অনল কে জানায় যে কোম্পানির মালিকানা তথাগত বাবু অনল কে দিয়ে গেছেন আর তার সমতুল পরিমাণ টাকা তিনি রূপার নামে ব্যাংক এ রেখে গেছেন ,আর কোনো একজনের অবর্তমানে তার সম্পত্তি পাবে তার সন্তান আর একজনের এবং তার সন্তানের অবর্তমানে অপরজন সেই সম্পত্তি পাবে।
কিন্তু অনলের দরকার ছিল অনেক অনেক টাকা নেশা,মদ,ফুর্তি,রেস, জুয়া এসব করে এখন সে সর্বশান্ত,বন্ধু বান্ধব সবার কাছে লাখ লাখ টাকা ঋণ তাই অনল বুদ্ধী করে ফেললো টাকা পেতে গেলে তাকে দুনিয়া থেকে সরাতে হবে তার বোন কে,বোন বাড়ি ছেড়ে গেলেও তথাগত বাবুকে না জানিয়ে সে খোজ নিত তার বোনের তাই রূপা কি করে কোথায় যায় সব ছিল তার নখদর্পণে তাকে মারার কৌশল বের করতে তার এক সেকেন্ড সময় লাগলো না,রোজ বিকাল পাঁচটায় যখন রূপা স্কুটি নিয়ে অফিস থেকে ফেরে তখন পিছন থেকে লরি দিয়ে পিসে দিলেই হবে কার্য সিদ্ধি তাই এইমত অনল ঠিক করে ফেললো একজন কন্ট্রাক্ট কিলার কে কিন্তু যেদিন তাকে মারতে গেলো সেদিন রূপা স্কুটি তে না চড়ে,ফিরছিল তপনের বাইকে তাই আর উপায় না পেয়ে কিলার দুজন কেই শেষ করে ফেলে।অনলের এর পরের টার্গেট ছিল রেনু কিন্তু তার দাদুর জন্য সে কখনোই তাকে বাগে আনতে পারেনি,এতদিনের অপেক্ষার পর আজ এসেছে সুযোগ।
অনল খুব সাবধানে হাতে বিছার বাক্স নিয়ে রেনুর ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,রেনু তার ঘরে ঘুমিয়েও স্পষ্ট সব দেখতে পাচ্ছে , তার মামা তাকে মারার জন্যই ওই কুচকুচে কালো পোকাটা এনেছে সে তাও বুঝতে পারছে।আর এগুলো নতুন কিছু না যখন তার মামা তাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিল তখনই সে সব বুঝতে পেরেছিল।
অনল রেনুর ঘরের সামনে যেতেই তার মাথার ভেতর কি যেনো একটা নড়ে উঠলো,তারপর ভেতর থেকে তার ব্রেইন টা যেনো ছিরে যেতে লাগলো তারপর ভীষণ জোরে চিৎকার করে মেঝের উপর পড়ে গেলো,তার কান দিয়ে রক্ত বের হলো তার হাত থেকে বিছার বাক্স টা পড়ে ভেঙে গেলো আর বিছাটাও ছুটে কোথায় যেনো পালিয়ে গেলো,চিৎকার এর শব্দ শুনে পৃথা, ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো মেঝেতে পড়ে আছে একটা লাশ আর চার পাশে কাচের টুকরো ছড়িয়ে আছে, পুলিশ এলো , পোস্ট মর্টেম এ কিছু ধরা পড়লো না  ফরেনসিক রিপোর্ট এ অনলের পাকস্থলী তে অ্যালকোহল পাওয়া গেলো,সবাই মনে করলো যে অতিরিক্ত মদ খাওয়া র জন্যই তার এই অবস্থা হোয়েছে।আর এই সব কিছু নির্বিকার ভঙ্গি তে বসে বসে দেখলো রেনু।
দুদিন পর সকালে ব্রজ বাবু রেনু কে নিতে এলেন, তিনি পরের দিন ই ফিট হয়ে যাওয়া সত্বেও তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছেনা আর এদিকে অনলের খবর পাওয়ার পর একরকম ঝগড়া করে তিনি হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে এসেছেন।এসে তিনি পৃথা কে কথার ফাঁকে জিজ্ঞেস করলেন 'তোমরা এখন কি করবে কিছু ঠিক করেছ?'
পৃথা বললো যে 'কাকাবাবু দেখতেই তো পাচ্ছেন অবস্থা,উনি যা ঋণ করে গেছেন তাতে তো শোধ করাই আমার জন্য মুশকিল।যদিও বেশ কয়েকজন  দয়া দেখিয়ে বলেছেন আর টাকা দিতে হবেনা,আর বাদ বাকিদের টাকা এই বাড়িটা,আর ফ্যাক্টরি টা বিক্রি করে শোধ করবো।আর বাবা আজকে আমাদের নিয়ে যাবেন  ওই বাড়িতে।'
তারপর ব্রজ বাবু রেনু কে নিয়ে ওই বাড়ি থেকে বের হলেন।
আর কেউ না জানলেও কলেজে একসময় সাইকোলজির ছাত্র ব্রজবিহারী তরফদার জানেন অনলের মৃত্যুর কারণ। বাসে তার পাশের সিট এ বসে থাকা তার নাতনি রেনু কোনো সাধারণ মেয়ে না,তার মস্তিষ্কের আছে কিছু অসম্ভব ক্ষমতা,সে তার আগের জন্মের বলতে পারে,সে বলে যে সে আগের জন্মে ছিল পাইলট জনাথন হাঙ্কস,এক বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।সে ভবিষ্যত্ ও দেখতে পারে,ব্রজ বাবুর যে অসুখ হবে সে ব্যাপারে আগেই বলেছিল সে,কিন্তু সে ভবিষ্যতের সব দেখতে পারেনা অদূর ভবিষ্যতে কোনো বিশেষ ঘটনা ঘটলে তখন সে সম্পর্কে সে বলে।আর তার আছে এক বিশেষ ধরনের হিপ্নটিস্মম ক্ষমতা যার দ্বারা সে অন্য একজনের ব্রেইন কে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে ইচ্ছা মত কাজ করাতে পারে,যার প্রমাণ তিনি প্রথম পান যখন তিনি রেনুকে একদিন স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এক পাগলা ষাঁড় রেনুর দিকে ছুটে আসছিল তখন হঠাৎ করেই সেই ষাঁড় রাস্তার উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়,এই একই ক্ষমতার প্রয়োগ সে করেছে অনলের উপর।যেদিন তপন আর রূপার অ্যাকসিডেন্ট হয় সেদিন রেনু খুব কান্না করছিল হয়ত তাদের কে যেতে মানা করেছিল সে,কিন্তু 9 মাসের শিশুর কান্না বোঝার ক্ষমতা তাদের মতো সাধারণ মানুষের ছিলনা।যদিও রেনুর এই ক্ষমতার কথা তার দাদু ছাড়া আর কেউ জানেনা,আর কেউ হয়তো কোনো দিন জানবেও না।
ব্রজ বাবু পাশে তার নাতনির দিকে তাকালেন দেখলেন যে রেনুর চোখে মুখে এক দেবশিশুর মত  প্রশান্তির হাসি,তার চোখ দেখে মনে হলো কোনো পাখি যেনো খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে যাচ্ছে।

No comments:

Post a Comment